বারবার নকশা পরিবর্তনে সংস্কার কাজে ধীরগতি
আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার :: হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজার-টেকনাফ সমুদ্রতীরবর্তী মেরিন ড্রাইভে যান চলাচল এখন অনেকটা নির্ভর করছে জোয়ার-ভাটার উপর। সাগরে ভাটা থাকলেই কেবল মেরিন ড্রাইভ সচল থাকে, আর জোয়ারে শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মেরিন ড্রাইভের সাথে শহরের একমাত্র সংযোগ সড়কটি সংস্কারের জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে বন্ধ রেখেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের পাশাপাশি কলাতলীর দক্ষিণ অংশের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
কক্সবাজার পৌরসভার পক্ষ থেকে গত জানুয়ারির শেষদিকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৩ মাসের জন্য কলাতলীর সড়কটি সংস্কারের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা করে। যথারীতি ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সড়কটি বন্ধ করে দেয়া হলে শহরের সাথে মেরিন ড্রাইভ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ মেরিন ড্রাইভের বেইলি হ্যাচারি পয়েন্ট থেকে সমুদ্র সৈকতে ওঠানামার একটি বিকল্প পথ তৈরি করে। একইভাবে কলাতলী পয়েন্টেও মাটি দিয়ে পথ তৈরি করে। তবে সমুদ্র সৈকত ধরে পূর্বের ন্যায় যান চলাচল করতে চাইলে সমুদ্রের জোয়ার ভাটার উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।
বর্তমানে প্রতিদিন দুবার জোয়ারের সময় ৪/৫ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে শহরের একাংশের হাজার হাজার মানুষ ও শত শত যানবাহন সাময়িকভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এছাড়া সমুদ্র সৈকত দিয়ে চলাচল করার সময় জোয়ারের কারণে প্রতিদিন দুর্ঘটনাও ঘটছে। এতে যাত্রীবাহী অটোরিকশা ও ইজিবাইকগুলো ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, কলাতলীর দক্ষিণে মেরিন ড্রাইভের ২ কিলোমিটারের মধ্যে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও কোনো হাইস্কুল নেই। তাই ওই অংশের বেশিরভাগ শিশুকে সড়কটি ব্যবহার করে কলাতলী উত্তর অংশে আসতে হয়।
স্থানীয় একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ও দরিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা আহমদ আসরার ও একই স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আহমদ আবরার চকরিয়া নিউজকে জানায়, আগে স্কুলে আসা-যাওয়ায় তাদের জনপ্রতি ভাড়া দিতে হত ৫ টাকা করে ১০ টাকা। এখন দিতে হচ্ছে ২০ টাকা করে ৪০ টাকা। এছাড়া ঠিকমত গাড়ি পাওয়া যায় না কিংবা জোয়ার ভাটার কারণে ঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছানো যায় না। কলাতলী হাইস্কুলের শিক্ষক ছৈয়দ নূর ও স্থানীয় কেজি স্কুলের শিক্ষক হুমায়ূন কবীর জানান, রাস্তা বন্ধ করার পর থেকে অসংখ্য শিশু স্কুলে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. ইসমাইল সওদাগর চকরিয়া নিউজকে বলেন, কলাতলী সড়কের সংস্কার কাজ শুরুর পর থেকেই দক্ষিণ অংশের ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েছেন। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের সাথে নিয়মিত বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। একইভাবে মেরিন ড্রাইভের অর্ধশতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্টগুলোও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান হিমছড়ির পর্যটন ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন।
কক্সবাজার পৌরসভা সূত্র জানায়, ইউজিআইআইটি প্রকল্পের অধীনে অন্য আরো দুটি সড়কের সংস্কার কাজসহ প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কারের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
সহকারী প্রকৌশলী টিটন দাশ চকরিয়া নিউজকে জানান, পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী ৩৬৫ দিনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হয়। কিন্তু ড্রেনের জন্য জমি নিয়ে জটিলতা এবং বার বার ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে সঠিক সময়ে কাজটি শেষ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এ প্রকল্পে প্রথমে ছিল শুধুমাত্র ১ হাজার ৫০০ মিটার কার্পেটিং সড়ক। পরবর্তীতে এটিকে কার্পেটিং থেকে আরসিসি ঢালাই সড়ক করা হয়। এরমধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে দাবি আসে সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণের। ড্রেনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করতে গেলেই জটিলতা শুরু হয়। এ নিয়ে এলাকাবাসীর অনেকের সঙ্গে পৌর কর্তৃপক্ষের বিরোধ দেখা দেয়। এসব কারণে মূলত সংস্কার কাজে ধীরগতি চলছে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মাত্র ২৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দুই-তিনমাসের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করা যাবে।
পাঠকের মতামত: